সর্বপ্রথম আমরা ইসলাম ধর্ম মতে সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআনে জ্বীন সম্পর্কে কি কি বলা হয়েছে সেগুলো জেনে নিই [বলা বাহুল্য এখানে যে জাস্টিফিকেশান সেটা কেবলই ইসলাম ধর্ম তথা বিশ্বাসী মানসিকতার রেফারেন্স ফ্রেম স্বাপেক্ষ]।
বিবৃতি:-
কুরআনে জ্বীন সম্পর্কে বিবৃত আয়াতগুলি বিভিন্ন সূরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবগুলিকে এক জায়গায় সংগ্রহ করা এবং একটি সহজবোধ্য বাংলা অনুবাদে উপস্থাপন করা বেশ জটিল একটি কাজ। কারণ, আয়াতগুলোর অর্থ গভীর এবং বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে; তবুও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হলো।
প্রয়াস:-০১
6|130|হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেনি? যাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের এ দিনের সাক্ষাতের ভীতি প্রদর্শন করতেন? তারা বলবেঃ আমরা স্বীয় গোনাহ স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে স্বীকার করে নিয়েছে যে, তারা কাফের ছিল।
7|179|আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।
11|119|তোমার পালনকর্তা যাদের উপর রহমত করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব।
17|88|বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।
27|17|সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।
37|158|তারা আল্লাহ ও জ্বিনদের মধ্যে সম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে, অথচ জ্বিনেরা জানে যে, তারা গ্রেফতার হয়ে আসবে।
46|18|তাদের পূর্বে যে সব জ্বিন ও মানুষ গত হয়েছে, তাদের মধ্যে এ ধরনের লোকদের প্রতিও শাস্তিবানী অবধারিত হয়ে গেছে। নিশ্চয় তারা ছিল ক্ষতিগ্রস্থ।
114|6|জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
প্রয়াস:-০২
১. সুরা আল-হিজর (১৫:২৬-২৭)
আয়াত ২৬-২৭:
"আমি তো মানুষের সৃষ্টি করেছি কালো কাদামাটি থেকে, যা রূপ পরিবর্তন করে। আর জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি প্রচণ্ড উত্তপ্ত অগ্নি থেকে।"
২. সুরা আর-রহমান (৫৫:১৫)
আয়াত ১৫:
"আর তিনি জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন অগ্নি থেকে।"
৩. সুরা আল-আ'রাফ (৭:২৭)
আয়াত ২৭:
"হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিপথগামী না করে, যেমন তোমাদের পিতামাতাকে (আদম ও হাওয়াকে) জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল। সে তাদের পোশাক খুলে দিয়েছিল, যাতে তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ পায়। সে তোমাদেরকে দেখে, তোমরা তাকে দেখতে পাও না। আমরা শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু বানিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।"
৪. সুরা আল-জ্বীন (৭২:১-২)
আয়াত ১-২:
"বলুন, আমার প্রতি ওহি করা হয়েছে যে, কিছু জ্বীন শ্রবণ করল এবং তারা বলল, 'আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি। যা সত্য পথের দিকে পরিচালিত করে। সুতরাং আমরা তাতে ঈমান এনেছি এবং আমরা কখনও আমাদের প্রভুর সাথে কাউকে শরিক করব না।'"
৫. সুরা আস-সাফফাত (৩৭:৬৫-৬৬)
আয়াত ৬৫-৬৬:
"এতে একটি গাছ রয়েছে যা জাহান্নামের মূল থেকে উঠে এসেছে। এর ফল শয়তানের মাথার মতো।"
৬. সুরা আন-নামল (২৭:৩৯)
আয়াত ৩৯:
"এক শক্তিশালী জ্বীন বলল, 'আমি আপনাকে তা নিয়ে আসব, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার আগেই। আমি এ কাজটি করতে সক্ষম এবং বিশ্বাসযোগ্য।'"
৭. সুরা আহকাফ (৪৬:২৯-৩১)
আয়াত ২৯-৩১:
"একবার আমি কয়েকজন জ্বীনকে আপনার কাছে পাঠিয়েছিলাম কুরআন শোনার জন্য। তারা যখন তা শুনল তখন বলল, 'আমরা শুনে যাচ্ছি, সুতরাং চুপ থাকো!' যখন তা শেষ হলো, তারা নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে সতর্ক করল। তারা বলল, 'হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এক কিতাব শুনেছি যা মুসার পরে অবতীর্ণ হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং সত্যের দিকে ও সঠিক পথে পথপ্রদর্শন করে।'"
৮. সুরা সাবা (৩৪:১৪)
আয়াত ১৪:
"অতঃপর যখন আমরা তার মৃত্যু নির্ধারণ করলাম তখন জিনদেরকে তার মৃত্যুর সংবাদ কেউই জানাতে পারেনি। তার মৃত্যুর কথা বোঝার জন্য একমাত্র জমিনের কীটই যথেষ্ট ছিল। যে তার লাঠি খেয়েছিল এবং অবশেষে তা ভেঙে পড়েছিল। তখন জ্বীনরা বুঝতে পারল যে, যদি তারা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখত, তবে অপমানজনক কষ্টে পতিত থাকত না।"
প্রয়াস:-০৩
১. সুরা আল-বাকারাহ (২:২৭৫)
আয়াত:
"যারা সুদ খায়, তারা সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তারা বলে, ‘বেচা-কেনা তো সুদের মতোই।’ অথচ আল্লাহ বেচা-কেনাকে বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।"
বর্ণনা:
এখানে শয়তান (যিনি জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত) মানুষকে কিভাবে প্ররোচিত করে, তা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. সুরা আল-আনআম (৬:১০০)
আয়াত:
"তারা আল্লাহর জন্য জ্বীনদের অংশীদার বানায়, অথচ তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন।"
বর্ণনা:
এই আয়াতে বলা হয়েছে, কিছু মানুষ জ্বীনদের আল্লাহর অংশীদার বা উপাস্য হিসেবে মেনে নেয়।
৩. সুরা আল-কাহফ (১৮:৫০)
আয়াত:
"আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সিজদা করো,’ তখন তারা সিজদা করল, তবে ইবলিস করল না। সে ছিল জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করল।"
বর্ণনা:
এখানে ইবলিসের (শয়তান) পরিচয় দেওয়া হয়েছে যে, সে ছিল জ্বীন এবং আদমকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল।
৪. সুরা আশ-শু'আরা (২৬:২১০-২১২)
আয়াত:
"এটি জ্বীনদের দ্বারা অবতীর্ণ হয়নি। তারা এটির জন্য উপযুক্তও নয়, আর তারা এটি করতে পারে না। তাদেরকে তো শোনা থেকে দূরে রাখা হয়েছে।"
বর্ণনা:
এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, জ্বীনরা কুরআন অবতীর্ণ করতে পারে না।
৫. সুরা সাবা (৩৪:১২-১৪)
আয়াত:
"আর সুলায়মানের জন্য বায়ুকে নিয়ন্ত্রণে দিয়েছিলাম, যা এক মাসের পথ এক সকালে পাড়ি দিত এবং এক মাসের পথ এক সন্ধ্যায়। আর আমি তার জন্য তামা গলিয়ে প্রবাহিত করলাম এবং কিছু জ্বীনকে তার অধীনে করলাম।"
বর্ণনা:
জ্বীনরা সুলায়মান (আ.)-এর অধীনে কাজ করত এবং তাদের দ্বারা বিভিন্ন কাজ করানো হতো।
৬. সুরা আল-আনআম (৬:১১২)
আয়াত:
"এভাবেই আমি প্রতিটি নবীর জন্য মানব ও জ্বীন শত্রু বানিয়েছি। তারা একে অপরকে চাকচিক্যময় কথা শিখিয়ে প্রতারণা করে।"
বর্ণনা:
মানব ও জ্বীনের মধ্যে কিছু শয়তান আছে যারা মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।
৭. সুরা আদ-দুখান (৪৪:৫৮-৫৯)
আয়াত:
"আমরা জ্বীন ও মানবজাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।"
বর্ণনা:
এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, জ্বীনদের সৃষ্টির উদ্দেশ্যও মানুষের মতোই—আল্লাহর ইবাদত করা।
৮. সুরা ফাতির (৩৫:৬)
আয়াত:
"নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু। তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো। সে তো তার অনুসারীদের আহ্বান জানায়, যেন তারা জাহান্নামের অধিবাসী হয়।"
বর্ণনা:
জ্বীনদের মধ্যকার শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় এবং তাদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
৯. সুরা আল-আহযাব (৩৩:৫৮)
আয়াত:
"যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, অথচ তারা কোনো অপরাধ করেনি, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করবে।"
বর্ণনা:
জ্বীনদের প্ররোচনায় মানুষ একে অপরকে কষ্ট দেয়, যা এখানে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
১০. সুরা আল-ইমরান (৩:১৭৫)
আয়াত:
"এটা শয়তানই, যে তোমাদের ভয় দেখায় তার বন্ধুদের ভয় করতে। তবে তোমরা যদি মুমিন হও, তবে তাদের ভয় করো না; বরং আমাকে ভয় করো।"
বর্ণনা:
শয়তান, যা জ্বীনদের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত, মানুষকে ভয় দেখিয়ে দুর্বল করতে চায়।
১১. সুরা আল-মুমিনুন (২৩:৯৭-৯৮)
আয়াত:
"বলুন, 'হে আমার প্রভু! আমি আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে এবং হে আমার প্রভু, আমি তোমার আশ্রয় চাই তাদের উপস্থিতি থেকে।'"
বর্ণনা:
এখানে শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপরোক্ত সকল আয়াত পঠনে ইসলাম ধর্ম মতে জ্বীন সম্পর্কে যে সকল বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলো আপনাকে এটলিস্ট "ইসলাম ধর্মে জ্বীন" এর অস্তিত্ব এবং প্রকৃতি ও আচরণ সম্পর্কে পরিচয় ঘটাতে কিছুটা সক্ষম হয়েছে বৈকি - এখন আপনি এই বিষয়গুলো আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সচেষ্ট হতে পারেন; অন্যদিকে গ্রহনযোগ্য হাদিস সংকলন হতেও আরও তথ্যগত উপলব্ধি অর্জনে সক্ষমতা লাভ করতে পারেন।
এখন আমাদের এই যে লব্ধ ইসলামিক জ্ঞান সেটার ইমপ্লিমেশান ঘটিয়ে জ্বীন নামক অস্তিত্বের তরে আপন লাইফে ইফিসিয়েন্সি গেইন করার চেষ্টা করা যায়....