ইসলামী দৃষ্টিকোণ হতে জ্বীনের স্থিতিগত অবস্থিতির যদিও প্রকাশ আছে - তদুপরি একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আপনি দেখতে পাবেন যে "যদিও জ্বীন প্রকৃতিগতভাবে বেশ ক্ষমতাশালী তথাপি সেটা অবশ্যই আল্লাহর সক্ষমতার বাইরে নয়" তাই সর্বক্ষেত্রেই জ্বীনের যেরূপ উপস্থিতি বা অবস্থিতি হউক না কেন আপনি আল্লাহর নিকট সহায়তা প্রার্থনা করলে অবশ্যই সেসকল বিষয়ের খারাপ দিক হতে অনায়েসেই মুক্তির উপায় পেয়েই যাচ্ছেন...
এখন এই জ্বীনের অপক্রিয়া হতে রিলিফ পাওয়ার জন্য আপনি কি করতে পারেন?
যে জ্বীনের অস্তিত্বের অবকাশ ঘটিয়েছে কুরআন তাতেই এটার প্রতিবিধান আছে বৈকি! এখানে সেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হলো:-
জ্বীন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কুরআনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও দোয়া দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমাদের সুরক্ষা দেয় এবং আধ্যাত্মিকভাবে নিরাপদ রাখে। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও দোয়ার উল্লেখ করা হলো:
প্রায়াস-০১
১. সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারা: সূরা আল-ফাতিহা (১:১-৭): এই সূরাটি মুমিনদের জন্য সুরক্ষা ও আশ্রয়ের দোয়া। সূরা আল-বাকারা (২:১-২৮৬): বিশেষ করে শেষ দুই আয়াত (২৮৫-২৮৬) পড়া শয়তানের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খুব কার্যকর। ২. আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৫): আয়াতুল কুরসি পড়লে শয়তান ও ক্ষতিকর জ্বীন কাছাকাছি আসতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এটি রাতে পড়লে সকালে পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকা যায়। ৩. সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস: এই তিনটি সূরা একত্রে তিনবার করে পড়া শয়তান ও জ্বীনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ফজর ও মাগরিবের পর এই সূরাগুলো পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ৪. দোয়া ও জিকির: আউযুবিল্লাহ মিনাশ শাইতানির রাজীম: যে কোনো খারাপ কাজ থেকে বাঁচতে এই দোয়া পড়া জরুরি। বিসমিল্লাহ: যে কোনো কাজ শুরুর আগে বিসমিল্লাহ বললে আল্লাহর সুরক্ষা লাভ হয়। সকাল ও সন্ধ্যার জিকিরগুলো পড়লে (যেমন: "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু...") নিরাপত্তা বাড়ে। ৫. নিয়মিত নামাজ পড়া ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা: নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শয়তান ও জ্বীনের ক্ষতি থেকে রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দোয়া করতে হবে। এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে জ্বীন ও শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
প্রয়াস:-০২
অপরাপর জ্বীন ও শয়তান বা যে কোনো অদৃশ্য শক্তির ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কুরআন ও হাদিসে বেশ কিছু পদ্ধতি ও দোয়া উল্লেখ আছে। নিচে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো: ১. আয়াত ও সূরা পাঠ করা: ‌‌ক) আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারা ২:২৫৫): "আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম..." প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে শয়তান ও জ্বীনের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা যায়। খ) সূরা আল-বাকারা (২:১-২৮৬): রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে বাড়িতে সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পালিয়ে যায়। বিশেষ করে শেষ দুই আয়াত: ২৮৫-২৮৬: "আমানার রাসুলু... আনসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।" রাতে শুতে যাওয়ার আগে পড়লে সারারাত সুরক্ষিত থাকা যায়। গ) সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক, সূরা আন-নাস: প্রতিদিন সকালে ও রাতে তিনবার করে এই তিনটি সূরা পড়লে যে কোনো ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ২. বিশেষ দোয়া ও জিকির: ‌‌ক) সকালের ও সন্ধ্যার দোয়া: ১. "বিসমিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদুরু মা'আস-মিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই ওয়াহুয়াস সামি উল আলিম" অর্থ: "আল্লাহর নামে, যার নামে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না, তা আসমানেই হোক বা জমিনেই। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।" (তিনবার সকালে ও সন্ধ্যায় পড়া) খ) আসতাগফিরুল্লাহ: প্রতিদিন ১০০ বার আসতাগফিরুল্লাহ বলা শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করে। গ) লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু... এই দোয়াটি একশ বার পড়লে শয়তান ও ক্ষতিকর জ্বীন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ৩. নিয়মিত আমল: ‌‌ক) নামাজ পড়া: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শয়তান ও জ্বীন থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। নামাজ একজন মুমিনের জন্য আধ্যাত্মিক ঢাল হিসেবে কাজ করে। খ) বিসমিল্লাহ পড়া: প্রতিটি কাজের আগে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলা হলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। গ) ঘুমানোর আগে: রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে দু'হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক, ও সূরা আন-নাস তিনবার পড়তেন এবং পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেন। ঘ) বাড়িতে কুরআন তিলাওয়াত: নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করলে জ্বীন-শয়তান ঘর থেকে দূরে থাকে। ৪. বিশেষ দোয়া: ১. দোয়া ১: আউজু বিখালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক অর্থ: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যগুলোর আশ্রয় চাই, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন তার সব ধরনের ক্ষতির থেকে।” ২. দোয়া ২: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল অর্থ: “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম অভিভাবক।” ৫. কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ১. ঘরে আজান দেওয়া: জ্বীন ও শয়তান আজানের শব্দে পালিয়ে যায়। তাই ঘরে আজান দিলে শয়তান দূরে থাকে। ২. পবিত্রতা বজায় রাখা: শারীরিক ও পরিবেশগত পবিত্রতা রক্ষা করলে শয়তানের প্রভাব কমে যায়।
এখন যদি বলা হয় কুরআনের আলোকে জ্বীন কি হাজির করানো যায় কিনা এবং উহা দ্বারা আপন স্বার্থ সিদ্ধি সম্ভব কিনা তাহলে এতোটুকু জানা আবশ্যক হতে পারে "ইসলামের দৃষ্টিতে জ্বীন হাজির করার কোনো বৈধ পদ্ধতি নেই এবং কুরআনে এমন কোনো পদ্ধতি শেখানো হয়নি যা জ্বীনকে ডাকার বা তাদের সাহায্য নেওয়ার বৈধতা দেয়। বরং কুরআন ও হাদিসে জ্বীন ও শয়তানের থেকে দূরে থাকার এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জ্বীনকে ডাকার প্রচেষ্টা শিরক বা কুফরের পর্যায়ে যেতে পারে, যা ইসলাম স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে"। অন্যদিকে ইসলাম মতে জ্বীন হাজির করার আদৌ কোন গুরুত্ব নেই যেখানে "ইসলামে জ্বীনদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন বা তাদের হাজির করার কোনো নৈতিক বা উপকারী সিগনিফিকেন্স জানানো হয়নি বরং এটি নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। জ্বীন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা একটি ভিন্ন সৃষ্টি যারা আল্লাহর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি হয়েছে, যেমন মানুষ। তবে তাদের সাহায্য নেওয়া বা তাদের ডাকার কোনো অনুমতি বা প্রয়োজন নেই"
আচ্ছা এই মুহূর্তে আমাদের জ্বীনের এই বিশ্বাসগত বিষয়ের সাইকোলজিক্যাল ইউটিলাইজেশান প্রয়োজন যাতে আপনি পজেটিভলি বেনিফিটেড হতে সক্ষম হউন; চলুন যথাসম্ভব চেষ্টা করা যাক....

Utilisation