এখন ইসলামী ধর্ম বিশ্বাসে জ্বীন এর উপস্থিতিগত অবস্থিতি স্বাপেক্ষ আপনার জীবনে নৈতিকভাবে ইসলাম অনুমোদিত সাইকোলজিক্যাল ইউটিলাইজেশান এর প্রয়াস নেওয়া যাক...
সর্বপ্রথম এটা তো নিশ্চিত যে জ্বীন কর্তৃক আপনার জীবনে সফলতা লাভের ইসলামী বিধান মোতাবেক আদৌ তেমন কোন ইফেক্টিভিটি'ই নেই - বরং উহার ক্ষতি হতে সুরক্ষার বিষয়টি আপনাকে সাইকোলজিক্যালি মানসিক শক্তির যোগান দিবে এবং আপনাকে নিয়ত পজেটিভ ভাইবে আবেশিত রাখবে এক আল্লাহ প্রার্থনাতে - অর্থাৎ জ্বীন জাতির ক্ষতিকর দিকটিও পক্ষান্তরে আপনাকে ইসলামের প্রতি কনসানট্রেট রেখে প্রার্থনায় [রিভার্স সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশনস] অনুসারে নিয়ত নিযুক্ত রাখতে সচেষ্ট করবে - তাতে আপনি মানসিক প্রশান্তি অনুভব করতে পারেন।
এখন আমরা ইসলামী দিক অনুসারে ক্বারিন জীনের অথেনটিকেশন (ইসলামে সিদ্ধতা যাচাই) পূর্বক এটার ব্যবহারে প্রয়াস নিতে পারি...
সবার আগে জানে নিই ক্বারিন জ্বীন সম্পর্কে কুরআনে কি বলা আছে:
ক্বারিন জ্বীন (Qareen Jinn) ইসলামী বিশ্বাসমতে একটি বিশেষ প্রকারের জ্বীন, যা প্রতিটি মানুষের সঙ্গে জন্মের সময় থেকে যুক্ত থাকে। আরবি শব্দ "ক্বারিন" অর্থ হলো "সঙ্গী" বা "সহচর।" ইসলামী মতবাদে, ক্বারিন জ্বীনকে শয়তানের সহযোগী বা শয়তানের পক্ষ থেকে প্রেরিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার কাজ হলো মানুষকে মন্দ কাজের প্রতি প্ররোচিত করা এবং পাপের দিকে আকৃষ্ট করা।
ক্বারিন জ্বীন সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের উল্লেখ:
1. কুরআন:
ক্বারিন সম্পর্কে সরাসরি কুরআনে কিছু আয়াত আছে, যেমন:
"শয়তান বলবে: হে আমার পালনকর্তা, আমি তাকে পথভ্রষ্ট করিনি, বরং সে নিজেই গভীর পথভ্রষ্টতায় ছিল।"
(সূরা ক্বাফ, ৫০:২৭)
অন্য আয়াতে ক্বারিন শব্দের উল্লেখ আছে:
"যার জন্য শয়তানকে সঙ্গী করা হয়, সে খুবই মন্দ সঙ্গী।"
(সূরা যুখরুফ, ৪৩:৩৬)
2. হাদিস:
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
"প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে এক ক্বারিন (জ্বীন) থাকে।" সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনার সঙ্গেও কি?" তিনি বললেন, "হ্যাঁ, তবে আল্লাহ তাকে আমার জন্য বশ্যতা করিয়েছেন, ফলে সে আমাকে কেবল ভালো কাজের পরামর্শ দেয়।" (সহিহ মুসলিম)
ক্বারিনের বৈশিষ্ট্য:
1. মন্দ কাজের প্ররোচনা: ক্বারিনের প্রধান কাজ হলো মানুষকে পাপ ও অসৎ কাজে প্রলুব্ধ করা।
2. অদৃশ্য সত্তা: ক্বারিন জ্বীন চোখে দেখা যায় না, কারণ তারা জ্বীন জাতির অন্তর্ভুক্ত।
3. সতর্কতা প্রয়োজন: ইসলাম শিক্ষা দেয় যে ক্বারিনের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে আল্লাহর স্মরণ (যিকির), নামাজ এবং কুরআন তিলাওয়াত করা জরুরি।
ক্বারিন থেকে বাঁচার উপায়:
1. আয়াতুল কুরসি পাঠ: শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
2. সূরা ফালাক ও সূরা নাস: এই দুই সূরা পাঠ করলে শয়তানি প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়।
3. আল্লাহর স্মরণ: নিয়মিত যিকির, দোয়া এবং তাওবা ক্বারিনের প্ররোচনা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
ক্বারিন জ্বীনকে ইসলামে মন্দের উৎস হিসেবে দেখা হলেও, আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদত মানুষকে এদের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।
এখন সরাসরি ক্বারিন জ্বীন হাজির বা সহায়তা গ্রহনের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান:-
ক্বারিন জ্বীন হাজির করা বা তাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি ইসলামে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্বারিন জ্বীন বা অন্য কোনো জ্বীনকে হাজির করা বা তাদের সাহায্য নেওয়া শিরক বা কুফরির পর্যায়ে পড়তে পারে। এটি মানুষের জন্য বিপদজনক এবং আত্মিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কেন ক্বারিন জ্বীন হাজির করা উচিত নয়:
1. শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা: ক্বারিন বা জ্বীন হাজির করার চেষ্টায় মন্ত্র, তাবিজ বা অন্য কোনো জাদুকরী প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
2. জ্বীনের ক্ষতিকর প্রভাব: জ্বীন জাতি মানুষকে ধোঁকা দিতে এবং ক্ষতি করতে পারে। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া বিপজ্জনক।
3. ইসলামের নিষেধাজ্ঞা: কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে জ্বীনদের সঙ্গে যোগাযোগ বা তাদের সাহায্য নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"এবং কিছু মানুষ কিছু জ্বীনকে সাহায্য চেয়েছিল, ফলে তারা তাদের বিপথগামী করেছিল।" (সূরা আল-জিন, ৭২:৬)
হাদিসের সতর্কবাণী:
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি জাদু বা জ্যোতিষবিদদের কাছে যায় এবং তাদের কথা বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ ওহিকে অস্বীকার করল।" (আবু দাউদ)
ইসলামের নির্দেশনা:
1. আল্লাহর ওপর নির্ভর করা: জীবনের প্রতিটি সমস্যায় আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত।
2. দোয়া ও যিকির: ক্বারিনের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা উচিত।
3. তাওবা ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সঠিক পথে থাকার জন্য প্রার্থনা করা উচিত।
সতর্কবার্তা:
ক্বারিন বা কোনো জ্বীনকে হাজির করার চেষ্টা করলে তা শুধু আত্মিক ও মানসিক বিপদ ডেকে আনে না, বরং এটি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে। সুতরাং, এসব থেকে দূরে থাকা এবং আল্লাহর স্মরণে মনোযোগ দেওয়াই উত্তম।
এখন আমরা জ্বীন ও ক্বারিন জ্বীনের স্থিতিগত সাইকোলজিক্যাল ইফিসিয়েন্সি গেইন করার ক্ষেত্রে যেটা রিয়েলাইজ ও ইমপ্লিমেন্ট করতে পারি:-
(১) যখন আপনার মনে কোন খারাপ বিষয়ের কর্মের প্রতি তাড়না যোগাচ্ছেন তখন নফস ও ক্বারিন জীনের বিষটি স্মরণ করুন - তাতে হয়তো ইসলামের ঐ বিধান ও শিক্ষা আপনাকে উক্ত ক্রিয়া হতে আপনাকে নিরুৎসাহিত করে নৈতিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
(২) যেকোন অধ্যাত্মিকতায় আপনি অত্যাশ্চর্যের দরূণ অন্যের ফাঁদে নিজের ব্যক্তিগত সেনসেটিভ তথ্যের আদান প্রদান বা অর্থগত চুক্তির বিনিময়ে জ্বীন সাধনা দ্বারা যে আদৌ উপকৃত হবেন না সেটাতে ইনফ্লুয়েঞ্জ হবেন - যাতে আপনার জন্য বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরী না হয়।
(৩) যেকোন পরিস্থিতি বা কন্ডিশনে আল্লাহর সহায়তা লাভের প্রয়াস যা কিনা আপনার অবচেতন মনের ইচ্ছাশক্তির স্ট্যামিনা বজায় রেখে মানসিক শক্তির স্বার্থক ইমপ্লিমেন্টেশান ঘটাবে।
(৪) ক্বারিন জ্বীন যেহেতু আপনার সঙ্গী তাই সে সকল কুকর্মের নিয়ামক বা প্রভাবক রূপে একরূপ স্বাক্ষীও বটে - তথাপি ভাবুন তাহলে যে ক্বারিন জ্বীন'কে আপনার সাথে যুক্ত করেছেন সেই স্বয়ং "আল্লাহ" সর্বদাই আপনার ওপর মনিটরিং করছেন - তাই খারাপ কাজ করার পূর্বে ভাবুন [মন্দ কাজ হতে আপনার অবচেতন মন'কে বিরত রাখতে মানসিক উদ্দীপনা] / মন্দ কাজ করা হয়েই গেলে আল্লাহর নিকট তওবা করা [যা আসলে আত্ম অনুশোচনায় পরবর্তীতে মন্দ কাজ করাতে আপনাকে একরূপ সতর্কবানী দিবে] / যেকোন বিষয়'ই যে আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার শর্ত রাখে তাই জ্বীন বিষয়ে ভিক্টিমাইজ না হয়ে [আপনার মনের অবচেতন অনুভূতির এক আস্থাগত অবস্থান] আপনি দুঃশ্চিতা বা দূর্ভাবনা মুক্তিতে এক নির্ভারতার স্বস্তি লাভে সক্ষম হতে পারেন।
সর্বোপরি আপনার সুন্দর ও সফল জীননের তরে নিরন্তর শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।