সাধারণত যারা জ্বীন হাজির করে চিকিৎসা বা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন তারা আসলে সাইকোলজি বা বলা ভালো যে ডার্ক সাইকোলজির ইউটিলাইজেশান করে থাকেন এবং এ বিষয়ে তারা বেশ দক্ষতায় পটু হউন - খেয়াল করুন
(১) যারা জ্বীন হাজির করে যেমন তেমন ইচ্ছা কিছু করতে পারেন তাহলে নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য কেন তারা সেই জ্বীনের সহায়তা নেন না? (২) অনেক ক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট করে টাকা চায় না - যাতে সেবাগ্রহীতার মনে এক প্রকার নির্ভরতা ও আস্থা তৈরী হয় তাতে আরও অধিক বেশী টাকা ইনকামের অবকাশ থাকে; অপরাপর ফেইমের বিষয়টা তো রইলোই [উদাহরণস্বরূপ কেউ জ্বীন হাজির করাতে ১০১ টাকা চেয়ে থাকতে পারেন - অন্যদিকে কেউ আপনার সমস্যাতে কনসার্ন দিয়ে বলতে পারেন যে তোমার যা ইচ্ছা দিতে পারো এখানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই - তখন অবচেতন মনের উদ্দীপনায় হয়তো ১০১ টাকা নয় বরং স্বইচ্ছায় আপনি ৫০০ টাকা দিয়ে আসবেন] - একান্ত পক্ষে যারা টাকা গ্রহন করেন না তারাও আসলে টাকার পরিবর্তে অন্যসব সুবিধা [যেমন সম্মান ও পরিচিতি] লাভ করেন বৈকি!
বিঃদ্রঃ কেউ কেউ এমনটা বলে থাকেন যে জ্বীন যে সাধনা করে তার নিজের সুবিধাতে সে জ্বীনকে ব্যবহার করতে পারেন না - তথাপি আপনি স্পষ্টতই দেখতে পাবেন যে সিংহভাগ কবিরাজের ফাইনানশিয়াল রিসোর্স [কিছুক্ষেত্রে সেটা লুকানো থাকতে পারে] বেশ ভালো; যা আসলে তাদের ইনকামের দিকটাতে ফোকাস রাখতে পারেন - অন্যদিকে এই বিষয়টিরও তারা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্বরূপ মানসিকভাবে ডার্ক সাইকোলজির ইউটিলাইজেশান ঘটায় যে "এই কাবিরাজের এত্তো এত্তো সুনাম আর নাম ডাক তথাপি এতো সম্পদ - তাহলে সে কি আমার ঐ সামান্য ১০০/২০০ টাকার জন্য আল্লাহ [যা আসলে ধর্মীয় উদ্দীপনায় মানসিক স্থিতির আবেগের স্থান] বা আল্লাহ কালাম [দোয়া বোঝাতে] এর ব্যবহারে এমন প্রতারণার মতো কাজ করবে নাকি?! আবার সিংহভাগ এমন কবিরাজের আস্তানাতে ধূপ/আগড়বাতি/গোলাপজল/ওযু/পবিত্র থাকা ইত্যাদি ধর্মীয় ভাইব ব্যবহারে সেবা গ্রহীতার মনে ধর্মীয় আবেগের ব্যবহারে সাইকোলজিক্যালি সাবকনশিয়াস স্ট্যামিনার স্ট্যাটিক ইনআরশিয়া ব্যবহারে মূল ঘটন সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া এবং সেটার প্রতিবিধানে বিশ্বাসের হেতু তদবির দিয়ে থাকেন। আবার প্রায় এমন কবিরাজেরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিজেও ধর্মীয় লেবাস গ্রহন করেন বৈকি! এখন আরেকটি ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হলো " এমন কিছু মানুষ হয়তো থাকতে পারেন যারা আসলেই এমন জ্বীনে দোয়া ও তাবিজ কিংবা ঝাড়ফুক করেন সেটাকে প্রবঞ্চনার জন্য নয় - এরা নিজেরাই আসলে এই ধর্মীয় বিশ্বাসে পূর্ন আস্থা রাখায় সেবাগ্রহীতার তরে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেন মাত্র; যেখানে বিশ্বাসের দৃঢ়তাতে তারা যুক্তির ক্ল্যারিফিকেশান করতে নারাজ"।
এখন প্রশ্ন আসে যে তাহলে এইসব ক্রিয়াতে সেবা গ্রহীতার সমস্যার সমাধান কিভাবে ঘটে?
দেখুন এখানে পরিসংখ্যানগত কোন সুনির্দিষ্ট ডাটা যেহেতু নেই যে "কে কোন সমস্যাতে কতোটুকু সমাধান বা সহায়তা একদম পারিপার্শ্বিক প্রভাব ছাড়াই কেবলমাত্র উক্ত তদবিরের তরে কি ক্রিয়া লব্ধ হয়েছেন - সেটার নিরপেক্ষ গ্রাফ নেই যা এনালাইসিস করে পরিসংখ্যান তৈরী করা চলে তাই এটা একান্তই অস্বচ্ছ" আবার যারা সেবা তথ তদবির গ্রহন করেন তাদের অনেকাংশ'ই এমন কবিরাজীর জ্বীনগত তদবিরে প্রচ্ছন্ন থাকে যাতে তারা কবিরাজ পাল্টায় বটে তবে কবিরাজের জ্বীনগত তদবির কতোটা যৌক্তিক বা ভ্যালিড তাতে মূল্যায়ন করে না। আবার কবিরাজের চিকিৎসাতে যারা উপকৃত হয়েছে তাদের বিষয়টি বেশ ভালোই ছড়িয়ে যায় যেখানে তুলনামূলকভাবে যারা ফলপ্রসূ বেনিফিটেড হয়না তারা সেটা প্রচার করে না [এখানে সাইকোলজি এভাবে কাজ করে যাতে কেউ কবিরাজের মাধ্যমে অমুক তমুক করেছে (নেগেটিভ বিষয়ে) সেটা যেন প্রচার না হয় তাতে সামাজিক বা পারিবারিক রেলযোগের আশঙ্কা থাকে - অপরাপর ঘুরিয়ে পেচিয়ে কবিরাজের কৌশল তো রইলোই] - অনেক কবিরাজ আছে যারা কূটচালে কিছু সাজানো ইনফ্লুয়েঞ্জার ব্যবহার করে যারা ঐ কবিরাজের গুণকীর্তনে তার প্রশংসায় "উপকার পেয়েছি" এটাতে সেবাগ্রহীতার মনে আশার সঞ্চার ঘটায় - যা সাবকনশিয়াস মাইন্ডের বিশ্বাস ও আবেগে ইচ্ছাশক্তির বিবর্ধিত ইনআরশিয়া লাভে পজেটিভিটি গেইন করেন। আর "ঝড়ে বক মরে কবিরাজির কেরামতি বাড়ে" এর মতোই কাকতালীয় বিষয়ে সম্ভাবনার প্রেক্ষাপট তো রইলোই - সর্বোপরি মানব মনের প্লাসিবো ক্রিয়া কবিরাজের জ্বীনগত তদবিরে বিশ্বাস হেতু ক্রিয়াশীল হয় বৈকি তথাপি মিথ্যা ছলনা যতোই সুন্দর হউক উহার পজেটিভ ইউটিলাইজেশান করার মোটিভ ভিন্ন তা প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নয়!
এখন জ্বীনের মাধ্যমে যে জীবনের বিভিন্ন ইতিবৃত্ত জানা সেটা আসলে বিভিন্ন কমন সাবজেক্ট - নন ভার্বাল কমিউনিকেটিভ সিস্টেমে তথ্য জানার কৌশল - আপন মনের কথা পঠনে মাইন্ড রিডিং ট্রিকস ইত্যাদির ডার্ক সাইকোলজিক্যাল ইউটিলাইজেশান করা হয়ে থাকে; তাতে এমন একটি মানসিক অবস্থার সৃষ্টি ঘটে যেন "এই কবিরাজ বা ব্যক্তি জ্বীন মারফত আমার জীবনের অতীত ও বর্তমান বলে দিতে পরেছে (প্রেডিক্টিভ ফ্রেইস) তাহলে হয়তো ভবিষ্যতের সমাধান বা ভালো করার বিষয়টিও ক্ষমতা রাখেন" এতে ভক্তির সহিত মানসিক স্ট্যামিনার প্লাসিবো ক্রিয়াশীল হয় বৈকি!
অপরাপর জ্বীন বা ভূত না থাকলেও আমাদের মনের যে "ভয়" সেটা হতে যে মানসিক সঞ্চারণের সাইকোলজিক্যাল ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া তাতেও সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশনস এপ্লাই করলে ফলাফল (ফিডব্যাক) লাভ করা সম্ভব।
এখন জ্বীন আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে রোগীর বৈশিষ্ট্য তা আসলে একবাক্যে বলতে হলে ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতা স্বাপেক্ষ মানসিক আচরণের বিক্ষিপ্ততা [বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটা DID এর লক্ষনগত বহিঃপ্রকাশ তবে আরও জটিল ও যৌগিক মানসিক ক্রিয়ার প্রতিরূপ হতে পারে] - যেটার আপাত চিকিৎসাতে উক্ত রোগীর সাবকনশিয়াস মাইন্ডের বিশ্বাস ও চেতনার ব্যবহার ফলাফল লাভ করা সম্ভব হলেও এগুলোর ব্যাখ্যা এবং সঠিকরূপ চিকিৎসা পেতে সাইকোলজি যথেষ্ট ইফেক্টিভ বটে! ধর্মীয় সমালোচনা ব্যতিরেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ হতে যে ঝাড়ফুঁক বা পানি পড়া কিংবা রুকাইয়ার বিষয়ে বলা হয় উহার ফিডব্যাকে সাবকনশিয়াস ও আনকনশিয়াস মাইন্ডের এক্টিভিটির দরূণ ক্রিয়াশীলতা সহজেই ব্যাখ্যা ও সমাধান করা সম্ভবপর!
অপরাপর বিজ্ঞানের অপব্যাখ্যাতে জ্বীনের অস্তিত্বের স্থিতি স্থাপক করতে যারা উচ্চ ডাইমেনশনের বিষয়টি তুলে আনেন - তারা নিজেরাও মাত্রা তথা ডাইমেনশনের স্থানাংক বিষয়টি খাতা কলমে তথা উপাত্তগত নিয়মগুলো জানেন না কিংবা সেগুলোর ব্যবহারে কুযুক্তি এবং সূক্ষ লজিক্যাল ফ্যালাসির সহায়তা নেন; যা আসলেই চরম অনুচিত ক্রিয়া কেননা "স্রেফ কুসংস্কার হতে বিজ্ঞানের কোন সাবজেক্ট ব্যবহার করে লজিক্যাল ফ্যালাসি করলে সেটার গ্রহনযোগ্যতায় বিভিন্ন মানুষ তুলনামূলকভাবে আরও প্রচ্ছন্নতায় ডুবে যায়" এই বিষয়টি সচেতনভাবে স্মরণ রাখা একান্তই কর্তব্য।
অপরাপর জ্বীন না থাকলেও যে ভৌতিক অনুভূতির দায় স্বরূপ জ্বীনের অস্তিত্বের স্থিতিস্থাপক উপস্থিতি উপলব্ধি হয় সেটার পেছনে বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল উদ্দীপনা ও মানসিক অবস্থান তথাপি মস্তিষ্কের বিচিত্র ক্রিয়াকলাপ যেমন স্লিপ প্যারালাইসিসে বোবা জ্বীন, সিজোফ্রেনিয়াতে ব্রেইনের আচরণগত পরিবর্তন, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিজর্ডারে হলে একই ব্রেইনে বিভিন্ন সময়ে আলাদা সত্ত্বার অস্তিত্ব অনুভব এবং সেইরূপ চারিত্রিক বিহ্যাভ [যেমন গলার স্বর পরিবর্তন ইত্যাদি], স্প্লিট ব্রেইন সিন্ড্রোমে ব্রেইনের ডান আর বাম অংশে দুইটি আলাদা স্বত্বার উপস্থিতি, ইনফ্রাসনিক সাউন্ড ইফেক্ট, বদ্ধ ও আবদ্ধ পরিবেশ বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকায় সাইকেডেলিক অনুভূতি, ড্রাগের কারনে মস্তিষ্কের বিচ্যুত ভারসাম্যহীনতায় নানারূপ অনুভূতি, হ্যালুসিনেশান, বিভিন্ন ইলিউশান, ম্যাগনেটিক ফিল্ডের হেতু হিউম্যান ব্রেইনের কর্টেক্স প্রভাবিত হওয়া, শৈশব বা জীবনের নির্দিষ্ট কোন সময়ের ট্রমা বা অ্যাবিউজে ফলস মেমরী তৈরী হওয়া, মৃগী রোগ ফিজিক্যাল শক্তির বৃদ্ধি শক্তি, হিস্টোরিয়ার মতো গণ সংক্রমণে মস্তিষ্ক প্রভাবিত হওয়া, বিভিন্ন স্মৃতির পরস্পর সঠিক কম্বিনেশনারে অভাব, রাতের অন্ধকার বা কুয়াশায় ভয়ের বিস্তরনে চোখের ভ্রান্তি এবং বিভিন্ন ট্রিকস ইত্যাদি দায় রাখে।
সবিশেষ আপন মস্তিষ্কে অযাচিত ভয় পুষে কোন অযৌক্তিকতায় আপন মনের স্ট্যামিনা নষ্ট করার চেয়ে অবশ্যই যুক্তিবাদী মানসিকতায় অনুসন্ধানী ক্রিয়াতে জীবনের ডেডিকেশান অধিক শ্রেয়তর এবং স্বার্থক।
আপনার সুন্দর জীবনের তরে নিরন্তর শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।